আজ ঢাকা থেকে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠি বাড়ী ভ্রমণের ঘটনা আপনাদের শোনাতে চলেছি। কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ওনাকে নিয়ে নতুন করে কিছু লেখার আছে বলে তো আমার মনে হয় না, ওনার মত এত বড় কবি পৃথীবিতে খুব কমই আছেন। কবিগুরুর রচনা করেছেন অসংখ্য গল্প, কবিতা, গান, ছোট গল্প ইত্যাদি। কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ মে ১৮৬৭ সালে ত্বতকালিন বৃটিশ ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। এই মহান কবি তাঁর ৮০ বছর বয়সের জীবনে পৃথীবিকে উপহার দিয়েছেন ৯৫ টি ছোট গল্প এবং ১৯১৫ টি গান. এসকল ছোট গল্প ও গান গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান গ্রন্থে প্রকাশিত হয়।
বাংলা সাহিত্যে এত বড় কবির আভির্ভাব আগে আর কখনও হয়নি, তিঁনি একই সাথে ছিলেন গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, নাট্যকার ও দার্শনিক। আমার এই মহান কবির কুঠিবাড়ী দেখার ইচ্ছা রয়েয়েছে সেই ছোটবেলা থেকেই যখন ওনার একটি কবিতা পড়েছিলাম’আমাদের ছোটনদী চলে বাকেঁ বাকেঁ। বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ী, দুই ধার উচো তার ঢালু তার পারি.
কবিতার লাইনগুল লিখতে গিয়ে মোন ছুটে গেল সেই শিশু বেলার সৃতিতে। কত সুন্দর ছিল সেই শিশুকাল কত মধূর সব সৃতি রয়েছে সে শিশু কালের, আমাদের জীবনের সর্বশেষ্ঠ্র সময় হল শিশুকাল, সে সময়ের সৃতিগুল মনে পরলে আবেগে চোখ ভিজে আসে।
ঢাকা কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে পোড়াদাহ গামি ট্রেনের টিকেট কিনে নিলাম যদিও প্রথম দিন টিকেট কিন্তে গিয়ে কোন টিকেট পাইনি। তবে কয়েকদিন পর আবার টিকেট কাউন্টারে গেলাম এবং পেয়ে গেলাম আমার কাঙ্খিত টিকেট। বাসা থেকে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে চলে আসলাম কমলাপুর রেল স্টেশনে. যদিও আমার বন্ধু ফাহাদ আমার সাথে আসার জন্য খুব জিদ করছিল আমি অনেক কষ্টে ফাহাদের হাত এড়িয়ে একাই রওনা দিলাম কুষ্টিয়া জেলার পোড়াদাহ রেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে। কুষ্টিয়া জেলা তিলেখাজার জন্য অত্যান্ত বিখ্যাত, এ জেলায় যেমন রয়েছে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠি বাড়ী, তেমনই রয়েছে বাউল স¤্রাট লালন শাহের সমাধি, মামুন নদীয়ার মত প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পীর জন্মও এই কুষ্টিয়া জেলাতে।
এ জেলার প্রাকৃতীক সুন্দর্য সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে. বিশেষ করে গড়াই নদী, পদ্মা নদী, রেইন উইক পার্ক, কুষ্টিয়া পৌড়সভা সত্যিই দেখার মত জায়গা।
ট্রেনে ওঠার পর অপূর্ব প্রাকৃতিক সুন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে পোড়াদাহ রেল স্টেশনে পৌছে গেছি বুঝতে পারিরি। স্টেশনে নেমেই স্টেশনে অবস্থিত একটি চায়ের দোকান থেকে ধোয়া উঠা গরম চা পান করলাম। তার পর খেলাম ভাপা পিঠা এ পিঠার স্বাদ লিখে বোঝানোর মত মেধা শক্তি আমার নেই যারা এ পিঠা খেয়েছেন তারা নিশ্চই এ পিঠার স্বাদ সম্পর্কে অবগত আছেন।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইজি বাইকে উঠলাম কুষ্টিয়া জেলা শহরে প্রবেশের জন্য, ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগল কুষ্টিয়া মজমপুর গেটে পৌাছাতে। এখানে পৌছে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত জাহাঙ্গির হোটেলে দুপুরের খাবারটা সেরে নিলাম। খাবার সময়ই বুঝলাম এই হোটেলের কেন এত নাম ডাক কেন সবাই এই হোটেলের রান্নার এত প্রশংসা করে। আমি খেলাম সাদা ভাতের সাথে গরুর কালা ভুনা মাংশ ও সালাত, খাবার সময় আমার মনে হচ্ছিল যেন নিজের ঘরের রান্না করা খাবার খাচ্ছি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রওনা দিলাম কুষ্টিয়া জেলার কুমাড়খালি উপজেলার সিলাইদাহ গ্রামের উদ্দেশ্যে। এই গ্রামেই তো রয়েছে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী. মজমপুর গেট থেকে ইজি বাইকে চেপে প্রথমে গেলাম থানার মোড়, তারপর গেলাম মোল্লা তেঘরিয়া মোড়, সেখান থেকে বাসে করে চলে গেলাম আলাউদ্দিন নগর. এখান থেকে আবার ভ্যান গাড়ীতে চেপে পৌছে গেলাম শিলাইদাহ গ্রামে।
কুঠিবাড়ীঃ
এই বাড়ীটি শিলাইদাহ রবিন্দ্র কুঠিবাড়ী নামেও পরিচিত, এটি কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান প্রতি বছর সারা দেশ থেকে প্রচুর মানুষ এই কুঠিবাড়ী দেখতে আসেন। পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। প্রায় ১১ একর জমি জুরে রয়েছে কুঠিবাড়ীর স্থাপনা। এখানে রয়েছে পুকুর, বাগান এবং মুল বাড়ীটি. আমি এখানে কোন ছবি সংযুক্ত করছি না আপনারা গুগোল থেকে কুঠি বাড়ীর ছবি দেখতে পারেন.। মূল বসতবাড়ীতে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৫ টি কক্ষ আছে, বাংলাদেশ সরকার এই বাড়ীটিকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষনা করেছে।
বাড়ীটি বর্তমানে ঠাকুর সৃতিঘর হিসেবেও পরিচিত। ঠাকুর বাড়ী ঘোরাঘুরি শেষে কুষ্টিয়ার আরও বেশ কয়েকটি দর্শনিয় স্থানে বেড়াতে গিয়েছিলাম সেই গল্প আর একদিন করব সবাই ভাল থাকবেন লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ